মেহেরপুর জেলার মৎস্য বিভাগীয় কার্যক্রম
মেহেরপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী এই ৩টি উপজেলা নিয়ে এই জেলা গঠিত। মেহেরপুর জেলার মোট আয়তন ৭৫১.৬২ বর্গ কিলোমিটার এবং লোক সংখ্যা ৬,৫৫,৩৯২ জন। জেলায় মোট ১৮টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভা আছে। জেলার মোট জলায়তন ৫৩৬১.৫০ হেক্টর। উক্ত জলাশয়ে মাছ চাষের মাধ্যমে জেলার মাছের চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে।
জেলার মাছের উৎপাদনের সিংহভাগ আসে পুকুর থেকে। এছাড়া মাছ উৎপাদনের একটি বড় অংশ আসে বিল/বাওড় থেকে। বিল/বাওড় গুলো জেলা প্রশাসন থেকে মৎস্যজীবী সমিতির নিকট লীজ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া মাথাভাঙ্গা, কাজলা, ছেউটিয়া ও ভৈরব নদী থেকেও উল্লেখ্যযোগ্য পরিমান মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি পোনা উৎপাদনের ক্ষেত্রেও জেলার রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলাতেও পোনা সরবরাহ করা হয়। এখানে ১টি সরকারী হ্যাচারী ও ২টি বেসরকারী হ্যাচারীতে মাছের রেণু উৎপাদন করা হচ্ছে।
বর্তমানে জেলার বার্ষিক মাছের চাহিদা ১২৬৪৫ মেঃ টন। উৎপাদিত হচ্ছে ৯৯১০ মেঃ টন। বার্ষিক ২,৭৩৫ মেঃ টন মাছের ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে জেলার সব জলাশয়ে সারা বছর পানি না থাকায় মাছের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এসব প্রতিকুলতা সত্বেও জেলার সকল জলাশয়ের সুষ্ঠু ও সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের উক্ত ঘাটতি পুরণের লক্ষে উৎপাদন লক্ষমাত্রা অর্জনে মৎস্য অধিদপ্তর, মেহেরপুর কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে মাছের উৎপাদন বাড়াতে যে সমস্ত কর্মসূচী অব্যাহত আছে তা হলোঃ
(১) সম্প্রসারণ কার্যক্রমঃ
মৎস্য চাষীদের পুকুর পরিদর্শন করে তাঁদেরকে মাছ চাষ বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে যাতে তাঁরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক মৎস্য উৎপাদন করতে পারেন। আগ্রহী মৎস্য চাষীদেরকে জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসেও মাছ চাষ, মাছের রোগ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। তাছাড়া মৎস্য চাষের বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহেও মৎস্য চাষীদের সহায়তা করা হয়।
(২) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমঃ
মাছ ও চিংড়ী চাষ সম্প্রসারণ সহ এবং আধুনিক মৎস্য চাষ প্রযুক্তি মাছ চাষীদের নিকট পৌঁছানোর জন্য জেলা মৎস্য দপ্তর, উপজেলা মৎস্য দপ্তর এবং মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে মাছ চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। উক্ত কার্যক্রমের আওতায় পুকুরে কার্প জাতীয় মাছ চাষ, ধানক্ষেতে মাছ চাষ, সমাজ ভিত্তিক মাছ চাষ, থাই কৈ চাষ, গলদা চিংড়ী নার্সারী ব্যবস্থাপনা, গলদা চিংড়ী প্রদর্শনী নার্সারী ব্যবস্থাপনা, ধান ক্ষেতে গলদা চিংড়ী চাষ ব্যবস্থাপনা, গলদা চিংড়ী একক ও মিশ্রচাষ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং এনজিও এর সহযোগিতায় মাছ চাষের প্রশিক্ষন প্রদান করা হচ্ছে।
(৩) পোনা অবমুক্তি কার্যক্রমঃ
জেলার মুক্ত জলাশয় ও প্রাতিষ্ঠানিক জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক মাছের পোনা অবমুক্তি কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। ফলে মুক্ত জলাশয় ও প্রাতিষ্ঠানিক জলাশয়ে রুই জাতীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলাশয় সংশ্লিষ্ট সুফলভোগী/ মৎস্যজীবীগন উপকৃত হচ্ছে।
(৪) মৎস্য আইন বাস্তবায়নঃ
অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধ, নদীতে দেয়া অবৈধ বাঁধ অপসারণ, কারেন্ট জাল আটক, নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা বিক্রি বন্ধ সহ বিভিন্ন মৎস্য সংরক্ষন আইন বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া মৎস্য খাদ্য আইনে জেলার মৎস্য খাদ্য বিক্রেতাদের মধ্যে লাইসেন্স প্রদান এবং মৎস্য হ্যাচারী আইনে মৎস্য হ্যাচারীর নিবন্ধন প্রদান করা হচ্ছে।
(৫) মাছের খাদ্যমান পরীক্ষাঃ
মাছের খাদ্যমান পরীক্ষার মাধ্যমে বাজারে বিক্রিত মৎস্য খাদ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
(৬) ফরমালিন মুক্ত বাজার ঘোষণাঃ
ফরমালিন মুক্ত নিরাপদ মাছ যাতে সকলে পেতে পারে তার জন্য মাছবাজার পরিদর্শন সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। জেলার তিনটি উপজেলার প্রধান তিনটি প্রধান মাছ বাজারকে ফরমালিন মুক্ত মাছ বাজার ঘোষণা করা হয়েছে।
(৭) অভয়াশ্রম স্থাপনঃ
জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে অভয়য়াশ্রম স্থাপন করা হচ্ছে। অভয়াশ্রম স্থাপনের ফলে জলাশয়গুলোতে মাছের উৎপাদন কাঙ্খিত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিলুপ্তপ্রায়, বিপন্ন ও দুর্লভ প্রজাতির মাছ, যেমনঃ পুঁটি, তিতপুঁটি, মেনি, রাণি, টেংরা, মধুপাবদা, গজার, বাইম ইত্যাদি মাছের পুনরাবির্ভাব এবং প্রাপ্যতা উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(৮) ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমঃ
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর মধ্যে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীদের দ্বারা আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
(৯) বিল নার্সারীঃ
বিল তীরবর্তী জলাশয়ে বিল নার্সারী স্থাপন করে উৎপাদিত পোনা বিলে অবমুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে বিলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীগন উপকৃত হচ্ছে।
(১০) ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম (ফেজঃ ২):
২০২২-২৩ সালে সমাপ্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষির সমন্বয়ে সিআইজি গ্রুপ গঠন করে তাঁদেরকে মাছ চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষন প্রদান করা সহ সিআইজি গ্রুপ সদস্যদেরকে মাছ চাষ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
(১১) প্রজনন মৌসুম ইলিশ ইলিশের পরিবহন, বাজারজাত করণ, বিক্রয় নিষিদ্ধ করণঃ
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য সরকার নির্ধারিত সময়ে দেশ ব্যাপি কার্যক্রমের আওতায় মেহেরপুর জেলায় ইলিশের পরিবহন, বাজারজাত করণ, বিক্রয় নিষিদ্ধ করণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
(১২) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনঃ
প্রতি বছর সরকার নির্ধারিত সময়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচার, মতবিনিময় সভা, র্যালি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, মাছের পোনা অবমুক্তি, আলোচনা অনুষ্ঠান, ফরমালিন বিরোধী অভিযান ও মোবাইল কোর্ট, মাছ চাষ বিষয়ক প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন, সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সহ সপ্তাহব্যাপি বিভিন্ন কর্মসুচি বাস্তবায়ন করা হয়। জেলা সদর ছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হয়।
(১৩) সরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের কার্যক্রমঃ
মেহেরপুর জেলার সদর উপজেলায় ১টি ও গাংনী উপজেলায় ১টি সরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে। এই ২টি খামার থেকে নার্সারী মালিক ও মাছ চাষিদের মাঝে উন্নতমানের মাছের রেণু ও পোনা সরবরাহ করা হচ্ছে।
ভব্যিষৎ কর্মসূচিঃ
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS